Wellcome to National Portal
Main Comtent Skiped

Language and Culture

 

বরিশাল অঞ্চলের লোকসংস্কৃতি এখানকার জনজীবনের হৃদয়বৃত্তিরই অকৃত্রিম অনুভব, যার অকুণ্ঠ প্রকাশ ঘটেছে লোকসাহিত্য, লোকসঙ্গীত, লোকশিল্প আর লোকাচারের বিভিন্ন অনুষঙ্গের মাধ্যমে।

 

লোকসাহিত্য

বরিশাল জেলার লোকসাহিত্যের কতিপয় উপাদান সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন করা হলো:

ক. পুঁথি: লোকসাহিত্যের অন্যতম শাখা হিসেবে পুঁথি-সাহিত্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখানকার বিখ্যাত পুঁথিসমূহের মধ্যে গুনাই বিবি, রসুলের মেরাজ গমন, ইউসুফ-জোলেখা ইত্যাদি অন্যতম।

খ. প্রবাদ-প্রবচন: বরিশাল অঞ্চলের অধিবাসীদের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পরিহাসপ্রিয়তা। আর এই বৈশিষ্ট্যের কারণে অনেক সময়ে তারা অভিজ্ঞতাজাত জ্ঞানকে প্রবাদ-প্রবচনের মাধ্যমে ব্যঙ্গার্থে প্রকাশ করে থাকে। বরিশাল অঞ্চলে ব্যবহৃত এ ধরনের কতিপয় প্রবাদ-প্রবচনের হলো:

পোলা নষ্ট হাডে, ঝি নষ্ট ঘাডে

দরবারে ঠাঁই নাই, বাড়ি আইয়া মাগ কিলাই

 

গ. সিমিস্যা/শোলক: আবহমানকাল থেকে ধাঁ-ধাঁ বুদ্ধির খেলা হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে আছে। বরিশালের গ্রামাঞ্চলের সর্বত্র এই ধাঁ-ধাঁকে সিমিস্যা বা শোলক বলা হয়। এখানে কয়েকটি শোলক উত্তরসহ উল্লেখ করা হলো:

আল্লার কি কুদরত, লাঠির মধ্যে শরবত(আখ)

এক হাত গাছটা, ফল ধরে পাঁচটা(হাত)

 

লোকসঙ্গীত

লোকসঙ্গীতের যে সকল শাখা-প্রশাখায় এই অঞ্চল সমৃদ্ধ তার সামান্য পরিচিতি দেয়া হলো:

ক. সারি: সাধারণত সারিবদ্ধভাবে যে সঙ্গীত সমবেতভাবে পাওয়া হয়, সেই সঙ্গীতকেই সারি গান বলা হয়। নৌকাবাইচের সময়ে মাঝিরা দাঁড়ের ছন্দময় আওয়াজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে গান গায়, বরিশাল অঞ্চলে সেটা সারি গান হিসেবে পরিচিত।

খ. জারি: দেশের অন্যান্য এলাকার মতো বৃহত্তর বরিশালে জারি গানের ব্যাপক প্রচলন ও জনপ্রিয়তা রয়েছে। মূলত এই অঞ্চলের মুসলমান সম্প্রদায়ই এই গানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। একজন মূল গায়ক এবং তার কয়েকজন সহযোগী কর্তৃক জারি গান পরিবেশিত হয়ে থাকে।

গ. ভাটিয়ালি: ভাটি অঞ্চলের গান হিসেবেই ভাটিয়ালি গানের ব্যাপক পরিচিতি। আর সে কারণে বরিশাল অঞ্চলে এই গানের ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। নি:সঙ্গ নির্জন নদী-পথে নৌকার মাঝির একাকীত্ব দূরীকরণের গানই ভাটিয়ালি।

ঘ. যাত্রা: প্রাচীনকাল থেকেই এ অঞ্চলে যাত্রাপালা নামের বিশেষ ধরনের অভিনয় রীতি প্রচলিত। আঞ্চলিকভাবে ভ্রাম্যমাণ যাত্রাপালা বা গানের দলগুলো বরিশাল অঞ্চলে যুগ যুগ ধরে লোকসংস্কৃতিকে প্রতিনিধিত্ব করে আসছে।

ঙ. হয়লা/সয়লা: লোকসঙ্গীতের অন্যতম ধারা হিসেবে হয়লার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। হয়লা মূলত উৎসবকেন্দ্রিক সঙ্গীত। এই অঞ্চলের হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে হয়লার প্রচলন রয়েছে।

চ. গাজনের গীত: গাজন হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব। বিভিন্ন দেবতাকে কেন্দ্র করে গাজনের গীত রচিত হয়। কারো কারো ধারণা, গাজন প্রকৃতপক্ষে আদিম সমাজের বর্ষা বোধন উৎসব। গাজন উৎসবে যে গান পরিবেশিত হয় তাকেই গাজনের গীত বলে।

ছ. রয়ানী: লোককাহিনীকে ভিত্তি করে রচিত মনসাদেবীর মাহাত্ম্যসূচক সঙ্গীতই মূলত রয়ানী নামে পরিচিত। শ্রাবণ মাসের শেষ সাতদিনে মনসা পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ার সময়ে রয়ানী পরিবেশিত হয়।

  •